Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C
সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৩rd এপ্রিল ২০২৫

সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

পুরনো ঢাকা বা পুরান ঢাকা, ঢাকা মহানগরীর আদি জনপদ। গবেষকদের মতে, প্যারিসের পারি আর বাংলাদেশের পুরান ঢাকার মধ্যে রয়েছে বেশ সাদৃশ্য। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক জীবন্ত সাক্ষী পুরান ঢাকা । পুরান ঢাকার ভাষা অনেকটা ঢাকাইয়া বাংলা বলে পরিচিত। বাখরখানি, বিরিয়ানি, ভূনা খিচুড়ি, লাচ্ছি, সুতি কাবাব, শাহী জিলাপি, রকমারি ইফতার, মসলাদার পান আর নিরামিষের সুঘ্রাণে আমোদিত হয় পুরান ঢাকার বাতাস। বর্তমান বাহাদুর শাহ্ পার্ক (পূর্বে ভিক্টোরিয়া পার্ক), আহসান মঞ্জিল, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষিত শাঁখারী বাজার, জনাকীর্ণ সদরঘাট, কবি সাহিত্যিকদের পদচারণায় মুখর বিউটি বোর্ডিং, প্রকাশনার প্রাণকেন্দ্র বাংলাবাজার এবং পুরান ঢাকার প্রতিটি অলিগলি যেন এক একটি ইতিহাসের নীরব সাক্ষী। এই ইতিহাস, এই ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে যে প্রতিষ্ঠান, সেটিও ইতিহাসের আরেকটি অংশ, সরকারি শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী কলেজ।

স্মৃতি বিজড়িত পুরানো ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অবস্থান। এক একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত মূল ত্রিতল ভবনটির লাল ইটের গাঁথুনি যেনো ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে । এছাড়া এটি নান্দনিক স্থাপত্যকলারও একটি নিদর্শন বটে। স্বল্পায়তনের এই কলেজটির বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় চৌদ্দ হাজার। কলেজটি স্থাপিত হয় ১১ নভেম্বর, ১৯৪৯ সালে। তখন এ কলেজটির নাম ছিল কায়েদ-ই-আজম কলেজ। ৪০-নলগোলাস্থ (৫/১, জুম্মন ব্যাপারী লেন)-ভাওয়ালরাজ এস্টেট এর জমিতে অবস্থিত একটি জরাজীর্ণ ভবনে-কায়েদ-ই-আজম কলেজের যাত্রা শুরু। সে সময় ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট এর পাঁচ হাজার টাকা অর্থানুকূল্যে কলেজটির জরুরি সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে ৩৬-৩৭ লক্ষ্মীবাজারস্থ জমিটি ক্রয় করা হলে কলেজটি এখানে স্থানান্তরিত হয়। কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে ১৯৫০ সালে যোগদান করেন বিহার প্রভিন্সিয়াল সার্ভিসে কর্মরত স্বনামধন্য অধ্যাপক সৈয়দ জহির আহসান। প্রাথমিকভাবে এখানে আই এ, আই কম এবং বি কম কোর্স চালুর অনুমোদন ছিল । মোট ৩০০ শিক্ষার্থী এবং দশজন শিক্ষক নিয়ে ১৯৫১-৫২ শিক্ষাবর্ষ থেকে কলেজটি সরকারি অধিভুক্তি লাভ করে। ১৯৫৪ সালের ১৫ এপ্রিল কলেজের খ্যাতিমান অধ্যাপক জনাব এ. এম. এ. আর. ফাতেমী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই কলেজের ধারাবাহিক উন্নয়ন ঘটতে থাকে। ১৯৫৫ সালে বি এ (পাস) কোর্স খোলা হয়। ১৯৫৮ সালে স্নাতক শ্রেণিতে বিজ্ঞান কোর্স চালুর ঘটনা ছিল যুগান্তকারী। পরবর্তীতে গভর্ণর জাকির হোসেন ১১ নভেম্বর, ১৯৫৯ সালে কলেজ পরিদর্শনে এসে স্নাতক বিজ্ঞান কোর্স এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। ঢাকার আর কোন কলেজে তখনও স্নাতক শ্রেণিতে বিজ্ঞান কোর্স ছিল না।

অচিরেই এ কলেজটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানরূপে পরিচিতি লাভ করে । কলেজ কর্তৃপক্ষ পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর জনাব জাকির হোসেনকে কলেজের প্রধান পৃষ্ঠপোষক করার প্রস্তাব দিলে তিনি সানন্দে এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন । ততদিনে কলেজের ছাত্র সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪০০ এবং শিক্ষক সংখ্যা ৬০ জন । স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ গণতন্ত্রের মানসপুত্র জনাব হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর নামে ‘শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ' নামকরণ করা হয়। ১৯৮৪ সালের ১ নভেম্বর কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। এরপর কলেজের নতুন নামকরণ করা হয় সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। বর্তমানে এই কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান) ও মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। ২০১৭ সালে কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি লাভ করে। বর্তমানে ১৭টি বিষয়ে সম্মান ও ১৬ টি বিষয়ে মাস্টার্স শ্রেণিতে পাঠদান করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে অধ্যক্ষ এবং শিক্ষকমন্ডলীর নিরলস শ্রম ও অধ্যবসায়ের ফসল বর্তমান সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ তার অতীত গৌরব ধরে রাখার মানসে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।